স্বচ্ছ ভারত অভিযান রচনা

স্বচ্ছ ভারত অভিযান রচনা
স্বচ্ছ ভারত অভিযান রচনা

ভূমিকা

সম্প্রতি ভারত সরকার জাতীয় উন্নতির ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ে যে ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে চলেছেন তার মধ্যে অন্যতম হল স্বচ্ছ ভারত অভিযান। ২০১৪ সালে ভারত সরকার একটি জাতীয় প্রকল্পের ঘোষণা করেন যার মাধ্যমে দেশের ৪০৪১টি শহরে সড়ক এবং পরিকাঠামোকে পরিষ্কার করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে-প্রধানমন্ত্রী রাজঘাট সমাধিতে যার সূচনা করেন। ২০১৪ সালের ২রা অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী নিজে রাস্তা পরিষ্কার করেন ও এই কর্মসূচিতে ত্রিশ লক্ষ সরকারি কর্মচারি ও ছাত্ররা অংশগ্রহণ করেন।

লক্ষ্য

২০১৯ সালের ২রা অক্টোবরে মহাত্মা গান্ধীর ১৫০তম জন্মবার্ষিকীর মধ্যে এই প্রকল্প সম্পন্ন করার লক্ষ্য মাত্রা ধার্য করা হয়েছে। এই প্রকল্পের জন্য ৬২০০ কোটি অর্থ খরচ হবে বলে মনে করা হয়েছে। সমস্ত সংকীর্ণ রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয়তাবোধে উদ্দীপ্ত হওয়া এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য বলে জানানো হয়েছে।

প্রেক্ষাপট

স্বচ্ছ ভারত অভিযান শহর ও গ্রাম সমস্ত ক্ষেত্রে যাতে রূপায়িত হয় তার জন্য লক্ষ্য মাত্রা রাখা হয়েছে। গ্রামীণ স্বাস্থ্যবিধান কর্মসূচি প্রথম গৃহীত হয়েছিল ১৯৫৪ সালে। কিন্তু ১৯৮১ সালের জনগণনায় প্রমাণ হয় মাত্র এক শতাংশ গ্রামের মানুষ এই সুবিধা পেয়েছে। তাই ১৯৮১-১৯৯০ এই সময়ে এর উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। ১৯৯৯ সালে এই প্রকল্পকে বৃহত্তর রূপ দেবার চেষ্টা হয় সমস্ত মানুষকে স্বাস্থ্যবিধির মধ্যে এনে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করে। এজন্য দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী মানুষদের জন্য আবাসস্থল ও শৌচাগার নির্মাণ করে দেবার সিদ্ধান্ত হয়। স্বচ্ছ ভারত অভিযান আসলে ১৯৯৯ সালের নিবিড় স্বাস্থ্যবিধান প্রকল্পের বিস্তৃততর রূপ, যা ১লা এপ্রিল ২০১২ থেকে চালু হয়। আসলে এই প্রকল্পের মাধ্যমে ভারতের সমস্ত মানুষকে পরিচ্ছন্ন স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করাকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এজন্য বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ বান্ধব স্বাস্থ্যবিধির উপর জোর দেওয়া হয়েছে এবং তিনটি স্তরে (পরিকল্পনা, রূপায়ণ ও উন্নয়ন)

প্রয়োগ

প্রয়োগের লক্ষ্য রাখা হয়েছে। এই প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করার জন্য যে সূচি গ্রহণ করা হয়েছে, তা হলঃ (ক) মানুষের অভ্যাস ও ব্যবহারের সামগ্রিক পরিবর্তন আনা। (খ) গৃহ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অঙ্গনওয়াড়ি ও জনসমাগম হয় এমন স্থানগুলিতে জনসাধারণকে জনস্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করানো। (গ) বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিক করা। (ঘ) শৌচাগার ব্যবহার ও শৌচাগার বানানো। (ঙ) জনসাধারণের মধ্যে সঠিক সময়ে যথাযথভাবে হাত ধোয়ার অভ্যাস চালু করা। (চ) বৈজ্ঞানিক ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে মানুষের জীবনধারণের মৌল উপাদানগুলিকে সঠিক ব্যবহার।

ক্ষেত্র

স্বচ্ছ ভারত মিশন গ্রামীণ ক্ষেত্রে প্রয়োগের জন্য প্রত্যেকটি জেলাকে মূল ভিত্তি করে লক্ষ্যে পৌঁছানোর কর্মসূচি গৃহীত হয়েছে। এজন্য জেলাস্তর থেকে পঞ্চায়েত স্তর পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের নিয়ে কমিটি গড়ে উঠেছে-যার নেতৃত্বে রয়েছে রাজ্য সরকারের পঞ্চায়েত দপ্তর। গ্রাম পঞ্চায়েত, ব্লক ও জেলাস্তরে প্রকল্পের কাজকে ছড়িয়ে দিতে এক সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বিশেষ করে, খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ করার যে অভ্যাস গ্রামাঞ্চলে রয়েছে তা বন্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা এই প্রকল্পের প্রধান ক্ষেত্র। এছাড়া দেশের প্রধান নদী ও জলাধারগুলিকে (গঙ্গা, যমুনা, গোদাবরী, কাবেরী, ব্রহ্মপুত্র, তাপ্তি, নর্মদা) পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা ও দূষণমুক্ত রূপে গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

মূল্যায়ন

এই প্রকল্পের পরিচালনা ও মূল্যায়নের জন্য সর্বনিম্ন স্তর থেকে রাজ্যস্তর পর্যন্ত বিভিন্ন কমিটি গঠিত হয়েছে ও সময়মত পরিদর্শন ও মূল্যায়নের নীতি গৃহীত হয়েছে। ১২ হাজার টাকা ব্যয়ে শৌচাগার নির্মাণ, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জনস্বাস্থ্য বিধি যথাযথ উপায়ে পালন, পরিবেশ বান্ধব কর্মসূচির বাস্তবায়ন প্রভৃতির মূল্যায়ন করা ও কঠোরভাবে বাস্তব দিকের মূল্যায়ন করার ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে। ফলে স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি যে গৃহীত হয়েছে তার পরিদর্শন ও বাস্তবায়ন প্রকল্পকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে।

আরো পড়ুনঃ Daily Education Blog

গবেষণা

শুধু তাই নয়, এই প্রকল্পের বাস্তবায়নের জন্য গবেষণার ক্ষেত্রকে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় কম খরচে শৌচাগার নির্মাণ, কঠিন ও তরল বর্জ্যের যথাযথ পুনঃস্থাপন ও ব্যবস্থাপনা, পানীয় জলের মান নিরূপণ, জলাধার ও নদীগুলিকে দূষণ মুক্ত করা প্রভৃতি বিষয়গুলিকে গবেষণার জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে-যার দ্বারা সামগ্রিক লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে।

উপসংহার

সুতরাং যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ করার অভ্যাস দূরীকরণ, শৌচাগার নির্মাণ, যথাযথ ভাবে হাত ধোওয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি মনোযোগ দেওয়া, কঠিন ও তরল বর্জ্যের যথাযথ ব্যবস্থাপনা, বৈজ্ঞানিক ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পরিবেশ দূষণ সম্বন্দ্বে সচেতন হওয়া, জনস্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন করা এবং যার দ্বারা স্বচ্ছ ও সবুজ ভারতের ধারণায় উত্তরণ সম্ভব। শুধু তাই নয় পরাধীন ভারতবর্ষে গান্ধীজি যে মুক্ত ও উদার ভারতের স্বপ্ন দেখেছিলেন, বর্তমান সরকার মনে করে এভাবে এগোলে গান্ধীজির সেই লক্ষ্যে পৌঁছানো একান্তভাবেই সম্ভব। আমরা আশা করব আগামীদিনে সত্যিই এই প্রকল্পের দ্বারা অন্য এক ভারতবর্ষ দেখব যেখানে প্রতিটি মানুষ মনে প্রাণে স্বচ্ছতার ধারণায় পরবর্তী প্রজন্মের কাছে আদর্শস্বরূপ হয়ে থাকবে।

Leave a Comment